১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাত। এ এক এমনই রাত, যে রাত রাতের চেয়েও অধিক অন্ধকার। মুক্তিকামী বাঙালি জাতির উপরে নেমে এলো জলপাই রঙের ট্যাংকের তান্ডব। নিস্তব্ধ, আধার ভেদ করে শহরজুড়ে বর্বরতার আর্তনাদ। নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে ইয়াহিয়ার দোসররা। রক্তে লাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল। শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, হত্যা করা হয় শিক্ষকদেরও। আক্রান্ত হয় ইপিআর সদর দফতর পিলখানা। পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণ চালায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। সামান্য সম্বল নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ইপিআর এবং পুলিশ সদস্যরা। একদিকে যখন হত্যাযজ্ঞ অন্যদিকে তখন চলছে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের আয়োজন। সেটি বুঝতে পেরে গ্রেফতারের আগেই জাতির পিতা দিয়ে যান স্বাধীনতার ঘোষণা। ২৬ মার্চ ১৯৭১। যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি চ্যানেল বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৭টায় জানায়, সেই ঘোষণার খবর। ২৫ মার্চের সেই রাতের পর অদম্য সাহসে রুখে দাঁড়ায় বাঙালি। এক সাগর রক্ত পেরিয়ে উদিত হয় স্বাধীনতার লাল সূর্য। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী৷ ওই এক রাতেই ৫০ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়৷ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালি শহিদ হন৷ দুই লাখ নারী নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হন৷ কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও সেই গণহত্যার কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি৷ ফলে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা গেলেও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধী ১৯৫ জনকে বিচারের আওতায় আনা যায়নি৷ আর এখনো পাকিস্তান দাবি করে যে, তারা বাংলাদেশে কোনো গণহত্যা চালায়নি৷ অন্যদিকে যাতে গণহত্যা বন্ধ হয় তার জন্যও এই স্বীকৃতি প্রয়োজন৷
লেখকঃ হুসাইন মুহাম্মাদ, স্টাফ রিপোর্টার