২০০২ সালে এশিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠেয় প্রথম বিশ্বকাপে পঞ্চম এবং সর্বশেষবারের মতো সোনালি ট্রফি বগলদাবা করেছিল ব্রাজিল। ২০ বছর পর আবারও এশিয়া মহাদেশে আয়োজিত বিশ্বকাপে ষষ্ঠবারের মতো শিরোপা স্বপ্ন চোখে নিয়ে এসেছে সেলসাওরা। গ্রুপপর্ব এবং শেষ ষোলোর বাধা টপকে কোয়ার্টার ফাইনালেও পৌঁছে গেছে ব্রাজিলিয়ানরা। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ গতবারের রানারআপ ক্রোয়েশিয়া।
দুই দশক আগে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে শিরোপা জিততে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল ব্রাজিলের আক্রমণভাগ। সেই আসরের গোল্ডেন বুট জয়ী রোনালদো লিমা, রিভালদো, রোনালদিনহা- তিন আরের সমন্বয়ে গঠিত ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড লাইন করেছিল টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ১৮ গোল।
তিতের শিষ্যরা কাতারে পূর্বসূরীদের সেই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবেন কি-না, সেটী সময়ই বলে দেবে। তবে সেই কীর্তিগাঁথার পুনর্মঞ্চস্থ করতে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই আক্রমণভাগই। না, নেইমার-রিচার্লিসন-রাফিনহা-ভিনিসিয়াস-রদ্রিগোদের নিয়ে ব্রাজিলের আক্রমণভাগ প্রতিপক্ষের রক্ষণে ত্রাস সৃষ্টিতে পিছপা হচ্ছে না। কিন্তু ম্যাচের স্কোরলাইনে তা প্রকাশ পাচ্ছে কই!
পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান সোফাস্কোরের ভাষ্যমতে, দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত ব্রাজিল ১৫টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছে, যা এখন পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, গোলে সুযোগ নষ্ট করার দিক থেকে কাতার বিশ্বকাপে সবার ওপরেই রয়েছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। শেষ ষোলো পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপে ১২টি গোল করার পরিষ্কার সুযোগ হারিয়েছে সেলেসাওরা।
রিচার্লিসনের জোড়া গোলে সার্বিয়াকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে ব্রাজিলের কাতার বিশ্বকাপযাত্রা শুরু হয়। পরের ম্যাচে সুইজারল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে শেষ ষোলোর টিকিট পায় সেলেসাওরা। তবে কোনো ফরোয়ার্ড না, সুইসদের বিপক্ষে ব্রাজিলের গোলটি এসেছে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরোর পা থেকে।
দ্বিতীয় রাউন্ডে উত্তরণ নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় গ্রুপপর্বে ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সারির একাদশ নামিয়েছিল ব্রাজিল। তবে সেই দল নিয়েও অদম্য সিংহদের ভালোই কাঁপিয়েছিল সেলেসাওরা। তবে অজস্র সুযোগ মিসের মাশুল গুণে শেষদিকে গোল হজম করে আফ্রিকান দেশটির কাছে ০-১ ব্যবধানে হেরে যায় ব্রাজিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে ৩৬ মিনিটের মধ্যে ৪-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর বিরাট এক জয়েরই স্বপ্ন দেখেছিলেন ব্রাজিল–সমর্থকেরা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে কোনো গোল করতে পারেননি ব্রাজিলের তারকাসম্পন্ন আক্রমণভাগ। শেষ পর্যন্ত তাই ৪-১ গোলের জয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
সোফাস্কোরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গোলের সুযোগ সৃষ্টিতে প্রথম এবং তা নষ্ট করার দিক দিয়ে ব্রাজিলের পরেই আছে জার্মানি। টানা দ্বিতীয়বারের মতো গ্রুপপর্বে ছিটকে যাওয়া জার্মানরা গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল ১৭টি। তবে এর মধ্যে তারা নষ্ট করেছে ১১টি পরিষ্কার গোলের সুযোগ।
গোলের সুযোগ সৃষ্টি করার দিকে জার্মানি এবং ব্রাজিলের পরেই আছে ফ্রান্স। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা এখন পর্যন্ত ১৩টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল। তবে ৭টি গোলের সুযোগ নষ্ট করে তারা বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গোলের সুযোগ হারানোর দিকে চতুর্থ অবস্থানে আছে। ১০টি পরিষ্কার সুযোগ নষ্ট করে তাদের ওপরে আছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।
কাতার বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১২টি গোল করেছে ইংল্যান্ড। ৯টি গোল করে ফ্রান্স আছে দ্বিতীয় স্থানে। মরক্কোর কাছে টাইব্রকারে হেরে বিদায় নেওয়া স্পেনের গোলসংখ্যাও ৯টি। নেদারল্যান্ডস করেছে ৮টি গোল। ৭টি গোল করে যৌথভাবে এর পরের অবস্থানে রয়েছে দুই ল্যাটিন পরাশক্তি ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা।