পুলিশের এসআই পরিচয় দিয়ে এক ব্যবসায়ীকে টেলিফোনে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন রোকনুজ্জামান। শুক্রবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে কালুরঘাটের ইস্পাহানি রোড এলাকা থেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে সেই ব্যবসায়ীর ড্রেজিংয়ের পাইপসহ যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেবার চেষ্টা করে তার লোকজন। এ সময় পুলিশ পরিচয়ে ড্রেজারের যন্ত্রপাতি চুরির সময় দুইজনকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ কালুরঘাট এলাকায় পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যক্তি কয়েকদিন ধরে একজন ব্যবসায়ীকে ফোন করে নানা প্রকার ভয়ভীতি দেখাচ্ছিল। আজ চক্রটি পুলিশ পরিচয়ে কালুরঘাট এলাকায় ড্রেজারের যন্ত্রপাতি চুরির চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে ওই চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ড্রাইভার ও একজন চালক। ‘
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি পাঁচজনের নাম উল্লেখ করেছেন, যাচাই করে মামলা নেয়া হবে৷ আটক ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা কিছুক্ষণ পর জানানো হবে।
জানা যায়, ঘটনাস্থলে থাকা দারোয়ান মুসলেহ ড্রেজিং এর যন্ত্রপাতি গাড়ি তোলার সময় বাধা দেয়। এসময় তাকে মোবাইল ফোনে জনৈক ব্যক্তির সাথে কথা বলিয়ে দেয়া হয়। সেই ব্যক্তি পুলিশের এসআই রোকন পরিচয় দিয়ে যন্ত্রপাতি ট্রাকে করে সরিয়ে নিতে সহযোগিতা করতে বলেন। না হলে দাড়োয়ানকে বেঁধে থানায় নিয়ে যাবার হুমকি দেয়া হয়। বিষয়টি চাঁদগাও থানা পুলিশের কাছে জানানো হলে তারা জানান ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে জানান পুলিশের কোন টিম ড্রেজার সরানোর জন্য উল্লেখিত স্থানে যায় নি। তখন সেই দারোয়ান গাড়িতে যন্ত্রপাতি তুলতে বাধা দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুইজন গাড়ির চালকসহ দুইজনকে আটক করে।
ভুক্তভোগি ব্যবসায়ী এম হাসান বিল্ডার্সের পরিচালক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ গত কয়েকদিন ধরে একটি নাম্বার থেকে ( ০১৮৭৪৮……..৪৮) পুলিশের এসআই রোকন বলে ফোন দিয়ে আসছিলেন এই প্রতারক। আজ একই প্রতারক কালুরঘাটের একটি সাইটে ড্রেজিং এর ফাইপসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সরানোর চেষ্টা করলেও তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় নি নগরীর চান্দগাঁও থানার পুলিশ। এসআই রোকন ফোন করে বলে আসছিলেন সাইটে চোরাই মাল রাখা আছে। তার সাথে (এসআই রোকন) বসে সুরাহা করতে। ‘
এম হাসান বিল্ডার্সের পরিচালক কামাল উদ্দিন বলেন, রোকনুজ্জামান, মনসুর আলম পাপ্পী, ববিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ থানায় জমা দেয়া হয়েছে।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইনুর জানান, এমন প্রতারণার অভিযোগ পেয়েছি। গাড়ি চালক ও হেলফারকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। রোকনকে খুঁজে বের করতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে । সে কার পরোচনায় পুলিশের নাম ব্যবহার করে এমন চুরির চেষ্টা ও ব্যবসায়ীকে হুমকি দিয়ে আসছিল সেটি তদন্ত করে বের করা হবে। ‘
দারোয়ান ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় চট্টগ্রাম নগরীর কালুঘাট এলাকার ইস্পাহানি রোড় এলাকায় ড্রেজিং ব্যবসায়ীদের ড্রেজারসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ চুরিসহ একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন চাঁদাবাজি করে আসছে। মনসুর আলম পাপ্পী নামের এক বালু ব্যবসায়ী সাবেক মেরিন কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হাফিজ থেকে ড্রেজার ভাড়া নিয়ে তা কর্ণফুলী নদীকে লুকিয়ে রাখে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের অভিযানে পাপ্পির কাছে থাকা সব ড্রেজার ও ফাইপ উদ্ধার করা হয়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীকে যেসব যন্ত্রপাতি উদ্ধার করে বুঝিয়ে দেন।
দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে এলাকার বিভিন্ন বালু মহালের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে মনসুর আলম পাপ্পী নামের আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ধারী ব্যক্তি। সরকারের কাছ থেকে বৈধভাবে ইজারা নেওয়া বালুমহাল থেকেও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে পাপ্পীর বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় পুলিশের নাম ব্যবহার করে ব্যবসায়ীকে হুমকি দেওয়া এবং মালামাল লুট করার চেষ্টা করা প্রতারক রোকনুজ্জামান বালু সম্রাট মনসুর আলম পাপ্পীর ও ববি’র সহযোগী। তারা বিভিন্ন সময়ে পুলিশের পরিচয় দিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতো।