মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের কুখ্যাত ইনসেইন কারাগারে বিস্ফোরণে অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন।
বুধবার সকালে দুটি পার্সেল বোমা ওই কারাগারের প্রবেশপথে বিস্ফোরিত হয়। এতে কারাগারের তিন কর্মকর্তা ও পাঁচ দর্শনার্থী মারা যান। খবর বিবিসির।
ইনসেইন কারাগারটি দেশটির সবচেয়ে বড় কারাগার। এখানে প্রায় ১০ হাজারের মতো বন্দি আছে। যাদের অনেকেই মূলত রাজনৈতিক বন্দি।
কোনো গোষ্ঠীই এ হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করেনি। এতে আরও অন্তত ১৮ জন আহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, কারাগারটির পোস্ট রুমে একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। তবে আরেকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়নি এবং সেটিকে একটি প্লাস্টিক ব্যাগে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। যে পাঁচ দর্শনার্থী মারা গেছেন, তারা সবাই নারী এবং কারাগারে থাকা বন্দিদের স্বজন।
নিহতদের মধ্যে দেশটির ছাত্রনেতাদের একজন লিন টেট নেইং ওরফে জেমসের মা। তিনি আদালতে শুনানির দিনে তার ছেলের জন্য একটি বাক্সে করে খাবার নিয়ে গিয়েছিলেন। নেইংকে সামরিক জান্তা গত জুনে আটক করেছিল।
তার শ্বশুর নে উইন জানান, তিনি মর্গে গিয়ে নেইংয়ের মায়ের লাশ দেখেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার খুবই খারাপ লাগছে। তার স্বামী কিছু দিন আগেই মারা গেছেন। ছেলেকে কারাগারে গিয়ে খাবার ও অন্য দরকারি জিনিসপত্র দিতে একমাত্র তিনিই ছিলেন।
প্রায় এক দশক আগে ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিতি অর্জন করা লিন টেট নেইং অনেকবারই গ্রেফতার হয়েছেন। গত বছরের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করায় তাকে আবার আটক করে জান্তা সরকার।
অং সান সু চির বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে জান্তা ক্ষমতা দখল করেছিল।
ইনসেইন কারাগারটি বেশ বড় এবং এটিতে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। এটি দেশটির সাবেক রাজধানীর শহরতলিতে অবস্থিত।
শতবর্ষী পুরনো এ কারাগারটি মূলত কঠোর পরিস্থিতি ও বন্দিদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের জন্য কুখ্যাত বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে।
এদিকে সামরিক সরকার দেশের বড় অংশেই প্রতিরোধের মুখোমুখি হচ্ছে, বিশেষ করে যেখানে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স বা পিডিএফের গেরিলারা সক্রিয়।
ইয়াঙ্গুনে প্রায়ই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে গত বছর অভ্যুত্থানবিরোধী গণবিক্ষোভ দমনের পর থেকেই ছোট ছোট বোমা বিস্ফোরণ দেখা যাচ্ছে।
এগুলোর লক্ষ্যবস্তু থাকে সাধারণত জান্তা সরকারকে সহায়তা করছে এমন ব্যক্তিরা, যেমন— সরকারি কর্মকর্তা, কথিত সোর্স ও সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামগুলোতে বিমান হামলার সঙ্গে জড়িত পাইলটরা।
এ ছাড়া গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনাও ঘটে দেশটিতে। পর্যবেক্ষকরা রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পাশাপাশি এসব ঘটনাকে গৃহযুদ্ধের লক্ষণ হিসেবে মনে করেন।
ইউআর/