চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় ক্যামেরা

দেশের বিভিন্ন এলাকার পর্যটন কেন্দ্রে গিয়ে ফটোগ্রাফারদের সরকারি দপ্তরে চাকরির প্রলোভন দেখায়। পরে তাদের ঢাকায় নিয়ে এসে অভিনব কায়দায় হাতিয়ে নেয় ক্যামেরা এবং নগদ টাকাসহ অন্যান্য সামগ্রী। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই চক্রটি সক্রিয়।

সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন হাওড় রিসোর্ট থেকে কয়েকজনকে রাজধানীর হাতিরঝিলে আনে চক্রের সদস্যরা। একই কায়দায় তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় কয়েকটি ক্যামেরা, লেন্স, ব্যাটারি, মেমোরি কার্ড, চার্জার, মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ এবং নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। এই ঘটনার পর গোয়েন্দা জালে ধরা পড়েছেন চক্রের তিন সদস্য। গ্রেফতারের পর তারা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে জানিয়েছে নতুন প্রতারণার আদ্যোপান্ত। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এবং ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, মঙ্গলবার রাতে ময়মনসিংহ এবং রাজধানীর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ১৯টি ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়েছে। তারা ফটোগ্রাফার হিসাবে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামেও প্রতারণা করছিল।

প্রতারকদের কাছ থেকে সেনাবাহিনীর ভুয়া আইডি কার্ড, নেমপ্লেট, মাস্ক, বুট, রেইনকোট এবং সিলসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে। প্রতারণার সময় মোস্তফা কামাল মিলন নিজেকে সেনাবাহিনীল ক্যাপ্টেন বলে পচিয় দেয় বলে ডিবি প্রধান জানান। তিনি জানান, মিলনের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাশ। দীর্ঘদির ধরে প্রতারণা করলেও তার নামে অতীতের মাত্র একটি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে। তার সহযোগী নূরে আলম সরকার বিএ পাশ। আর রাসেল মোল্লাার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার নয়া বলেন, কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের বাসিন্দা তারেক মিয়া, তারেক, হাকিম, উলী উল্লাহ ও মো. তাপস মিয়া। বর্ষার সময় সেখানকার হাওড়ে আগত পর্যটকদের ছবি তোলা তাদের কালীন পেশা। দিন শেষে উপার্জন ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা। এভাবে পরিবার স্বাচ্ছন্দ্যেই চলছিল। হঠাৎ তাদের সামনে ক্যাপ্টেন সাগর পরিচয়ে হাজির হয় মিলন। প্রস্তাব আসে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখায় চাকরির। নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে অনুসরণ করায় তাদের কাজ। মাসে বেতন ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। ৩ মাস পর স্থায়ী। নিয়োগে কোনো পয়সা লাগবে না। এমন প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান সবাই। এরপর তাদের ঢাকায় এনে গোয়েন্দা ট্রেনিংয়ের সময় অভিনব কায়দায় প্রতারণা করা হয়।

গত ১৭ অক্টোবর হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেন প্রতারিত উলী উল্লাহ চৌধুরী (২০)। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের হাওড় রিসোর্টের সামনে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। এ সময় ওই ব্যক্তি নিজেকে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পরিচয় দেন এবং মিঠামইনে কর্মরত রয়েছেন বলে জানান। এ সময় ওই ব্যক্তির চুলের কাটিং, সেনাবাহিনীর লোগো সংবলিত মাস্ক, ট্রাউজার পরা ও কোমরে ঝুলানো সেনা বাহিনীর আইডি কার্ড দেখে তাকে ক্যাপ্টেন বলে বিশ্বাস করেন তারা (ক্যামেরাম্যান)।

পরে ওই ব্যক্তি ৮ অক্টোবর তার বন্ধুদের এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিয়ে মিঠামইন হাওড় রিসোর্টের সামনে থাকার নির্দেশ দেন। পরদিন তারেক, হাকিম, উলী উল্লা ও মো. তাপস সব ধরনের কাগজপত্র নিয়ে সকাল ১০টার দিকে ওই ব্যক্তির কাছে জমা দেন। এর পরদিন সকাল থেকে তাদের ডিউটি শুরু হবে বলে জানানো হয়। কথা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনে মাইক্রোবাসে তাদের সবাইকে ঢাকার হাতিরঝিল থানাধীন মহানগর ব্রিজে ওপর আনা হয়।

এরপর বেলা ৩টার দিকে তাদের হাতে একটি ছবি ধরিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয় ছবির এই ব্যক্তি হাতিরঝিল এলাকায়ই অবস্থান করেছেন এবং তাকে দেখা মাত্রই যেন ক্যাপ্টেন সাগরকে (মিলন) কল দেওয়া হয়। পরে তাদের কথামতো গাড়িতে ব্যাগ ও ক্যামেরা রেখে তাদের মধুবাগ ব্রিজে ও মহানগর ব্রিজের দিকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। গলায় ক্যামেরা থাকলে তাদের গোয়েন্দাগিরি ভেস্তে যেতে পারে বলেও জানানো হয়। মূলত এ কারণেই প্রতাককে ওই যুবকেরা বিশ্বাস করে। সঙ্গে থাকা মোবাইল দিয়ে ছবি তোলার জন্য বলা হয়। এরপর তারা হাতিরঝিল এলাকায় ছবি হাতে ঘুরতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিকাল ৫টার দিকে তারা ছবির ব্যক্তিকে না পেয়ে মহানগর ব্রিজে ফিরে আসে। এ সময় তারা সেখানে থাকা গাড়ি দেখতে না পেয়ে প্রতারক চক্রের সদস্যকে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

ইউআর/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img