মিয়ানমার থেকে আজও এলো গোলাগুলির বিকট শব্দ

সীমান্ত ঘেঁষা মিয়ানমার অভ্যন্তরে গোলাগুলি চলছে। আর এই গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দাদের কানে। সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, খুব বিকট শব্দ আসছে। এগুলো মর্টারশেলের শব্দ হতে পারে। প্রায় ১০-১২টি বিকট শব্দ শুনতে পান তারা।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের নাজির পাড়া থেকে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে বসবাসকারীরা ভারী অস্ত্রের গুলির শব্দ পান। নাফনদ ও সমুদ্রঘেরা এই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের বসতি। এর মধ্য একটি বড় অংশ নাফনদের সঙ্গে লাগোয়া।

বিকট গুলির শব্দ শোনার কথা স্বীকার করে টেকনাফ ২-বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় তাদের দেশে সংঘর্ষ চলছে। ফলে এপারে মাঝেমধ্যে গোলার শব্দ পাওয়া যায়। বিজিবি যেকোনও পরিস্থিতি ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে সীমান্তের বাসিন্দা যাতে কোনও ভয়ভীতির মধ্যে না থাকে সে বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সর্তক অবস্থানে বিজিবি।’

সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, টেকনাফের নাজির পাড়া ও শাহপরীর দ্বীপের ঠিক ওপারে মিয়ানমারের পাতংজা পাড়া ও মগ্নি পাড়া। আজকে বিকালে সেখানে গোলাগুলি হয়েছে। যার ফলে এপারে গুলির শব্দ পাওয়া গেছে।

সীমান্তের নাজির পাড়ার বাসিন্দা মো. এনাম বলেন, ‘আজকে গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। তবে সেখানে বিজিবি টহল বাড়িয়েছে। সেখানকার মানুষের মাঝে তেমন ভয় নেই।’

শাহপরীর দ্বীপ নাফনদের তীরের বাসিন্দা মো. কালাম বলেন, ‘আজকে বিকালে নাফনদের বেড়িবাঁধে বসেছিলাম, হঠাৎ মিয়ানমার সীমান্তে বিকট গুলির শব্দ পাই। এতে ঘরের শিশু ও নারীরা ভয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। পরে বুঝতে পারি, ওপারে সংঘর্ষের শব্দ। অন্তত ১০-১২টি বিকট শব্দ হয়েছে। এখানকার লোকজন বলাবলি করছে, হয়তো আবারও রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে পারে।’

এই বিষয়ে টেকনাফ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তের কাছাকাছি যেসব জায়গায় গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের খোঁজ রাখছি। পাশাপাশি এসব এলাকার সীমান্তের বসবাসকারীদের তালিকা তৈরি করছি। যাতে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।’

সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপএলাকার ইউপি সদস্য আবদুস সালাম জানান, বিকালে তার এলাকার লোকজন বিকট শব্দ পেয়েছেন। বিষয়টি তাকে অনেকেই জানিয়েছে। পরে ঘটনাটি সংশ্লিষ্টদের জানান তিনি।

এদিকে, সোমবার সকালে টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের খারাংগাগুনা ও উলুবনিয়া পাড়ায় ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছিল। ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল বিস্ফোরণে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মো. ইকবাল (১৭) নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হন। আহত হয়েছেন পাঁচ জন। একই দিন দুপুরে সীমান্ত এলাকা থেকে গরু আনতে গিয়ে মাইন বিস্ফোরণে উইনু থোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা নামে একজনের পায়ের নিম্নাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের বাংলাদেশ অভ্যন্তরে মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি বুলেট এসে পড়ে। ৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া দুটি গোলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকায় পড়ে। তার আগে ২৮ আগস্ট বিকাল ৩টার দিকে মিয়ানমার থেকে নিক্ষেপ করা একটি মর্টারশেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় ঘুমধুমের তুমব্রু উত্তর মসজিদের কাছে পড়ে। এসব ঘটনায় তুমব্রু সীমান্তের মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়, যা এখনও কাটেনি।

ইউআর/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img