উচ্চতর শিক্ষায় বড় বিনিয়োগে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক বিদেশে পিএইচডি ডিগ্রি করতে যেতে চান, তাদের পেছনে এই বিনিয়োগ করা হবে। ইউরোপ, আমেরিকা, ওশেনিয়া মহাদেশ-এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতে উল্লিখিত ডিগ্রি করতে গেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এই আর্থিক সহায়তা পাবেন। এটি ‘বৃত্তি’ হিসাবে দেওয়া হবে। অনেকটা বিনা শর্তেই অর্থায়ন করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। বৃহস্পতিবার আলাপকালে তিনি যুগান্তরকে বলেন, একজন ভালো গবেষক তৈরির পূর্বশর্ত হচ্ছে তাকে পিএইচডির মতো উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত করা। মূলত পিএইচডির মাধ্যমে একজন ব্যক্তির গবেষণায় হাতেখড়ি হয়। তাই মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বিশ্বখ্যাত গবেষকের অধীনে নামকরা ল্যাবে কাজ করে কেউ দেশে ফিরে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজে মনোনিবেশ করলে তার মাধ্যমে আরও ভালো গবেষক তৈরি ও জ্ঞানের নতুন দিক উন্মোচন হওয়া সম্ভব। এ লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পিএইচডি ডিগ্রির জন্য বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি বৃত্তিটি বাংলাদেশে দেওয়া হয়ে থাকে। এর নাম প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ। এর অধীনে একজন গবেষক প্রায় ২ কোটি টাকা পেয়ে থাকেন। আমরা ধারণা করছি, ওই ফেলোশিপের পরই দ্বিতীয় মূল্যমানের বৃত্তি হবে এটি। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য ইউজিসির বৈদেশিক পিএইচডি বৃত্তি (স্কলারশিপ)’। চলতি বছর থেকেই এই বৃত্তি প্রদানের লক্ষ্য আছে সংস্থাটির। এ খাতে প্রায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে।
ইতোমধ্যে ইউজিসি প্রস্তাবিত বৃত্তির নীতিমালা তৈরি করেছে। এ সংক্রান্ত নীতিমালা বৃহস্পতিবারই চূড়ান্ত করা হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে শিক্ষকরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ, যোগদানের পর চাকরি স্থায়ী হওয়া বা ২ বছর পার করতে হবে। স্কলারশিপ দেওয়া হবে তিন বছরের জন্য। কিন্তু চার বছরের মধ্যে ডিগ্রি শেষ করতে হবে।
গবেষকের বয়স হতে হবে ৪০ বছরের মধ্যে। সেই হিসাবে কেবল প্রভাষক থেকে সহযোগী অধ্যাপকরা আবেদন করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী, যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হলে এই বৃত্তি পাওয়া যাবে না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ৩০০-এর মধ্যে থাকতে হবে। ডিগ্রি শেষ করার পর দেশে ফিরে আসতে হবে। কেউ যদি কোনো কারণে চাকরি করতে না চান, তাহলে তিনি দেশে ফিরে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চার বছর চাকরি করে অন্যত্র যেতে পারবেন। নতুবা গৃহীত সমুদয় অর্থ (বৃত্তি এবং নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনভাতা) ১০ শতাংশ লাভসহ ফেরত দিতে হবে। কোর্স চলাকালীন দেশে এসে ১৫ দিনের বেশি থাকলে ইউজিসিকে জানাতে হবে।
বর্তমানে সবচেয়ে দামি যে ‘প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ’ দেওয়া হয়, সেটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিট থেকে পরিচালিত হচ্ছে। তবে এর জন্য গবেষক নির্বাচনসহ সাচিবিক কাজটি করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এর অধীনে পিএইচডি ও মাস্টার্সে পড়তে অনলাইনে আবেদন নিয়ে বৃত্তি দেওয়া হয়। আবেদনকারীকে ‘দ্য টাইম হায়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি ওভারঅল র্যাংকিং’ অনুযায়ী মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য ১ থেকে ২০০ এবং পিএইচডির জন্য ১ থেকে ১০০-এর মধ্যে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অফার লেটার থাকতে হবে। আইইএলটিএসে ৬.৫ কিংবা টোয়েফলে ৮০ পেতে হয়। সোশ্যাল প্রটেকশন, এডুকেশন, উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট, পাবলিক হেলথ, ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইকোনমিকস, পাবলিক সেক্টর ম্যানেজমেন্ট, লিগ্যাল অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি, ডিপ্লোম্যাসি, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি, অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস-এসব বিষয়ে অর্থায়ন করা হয়। এই ফেলোশিপ থেকে সম্পূর্ণ টিউশন ফি, জীবনভাতা (নির্ধারিত হারে মাস্টার্সের জন্য সর্বোচ্চ ১৮ মাস এবং পিএইচডির জন্য সর্বোচ্চ ৪৮ মাস), স্বাস্থ্যবিমা ভাতা, এককালীন সংস্থাপন ভাতা, এককালীন শিক্ষা উপকরণ ভাতা, তৃতীয় দেশে একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ ব্যয় দেওয়া হয়।
ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র বলেন, প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপে যেসব খাতে গবেষককে অর্থায়ন করা হয়, ইউজিসিও সেসব খাতে অর্থ দেবে। তবে দেশ অনুযায়ী জীবনযাত্রার ব্যয় একই রকম হয় না। এ কারণে কত টাকা দেওয়া হবে, সেটা নির্ধারিত হয়। আর এ কারণে বরাদ্দকৃত ১০ কোটি টাকায় কতটি বৃত্তি দেওয়া হবে-তাও বলা যাচ্ছে না। প্রাপ্ত আবেদন থেকে নির্বাচিতদের ব্যয়মাত্রা হিসাব করে বৃত্তি সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে এ খাতে বরাদ্দ আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
ইউআর/