সুষ্ঠু সমাধান না হলে একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা

কুমিল্লা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল কর্তৃক দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদকে কিল-ঘুষি মারার ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ‘বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ এসোসিয়েশন’।

যথাযথ ব্যবস্থা ও সমাধান না হলে ব্যক্তিত্ব, আত্মমর্যাদা, সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার জন্য একযোগে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

রোববার দুপুরে রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে এমন দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ এসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার। এসময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম খান বীরু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আজিজ, ইয়াসিন মিয়া, রেজাউল হক জানু, আবুল কালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট রিনা পারভীনসহ উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার বলেন, বিগত ১৬ জুলাই জাতীয় সংসদের মেম্বার্স ক্লাবে একজন সংসদ সদস্য (রাজী মোহাম্মদ ফখরুল) কর্তৃক যেভাবে আমাদের প্রিয় সহকর্মী জনগণের ভোটে নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে (আবুল কালাম আজাদ) ব্যক্তিস্বার্থে ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা হয়েছে- তা শুধু ঘৃণিতই নয়, নজিরবিহীন কলঙ্কও বটে। এ ঘটনা কলুষিত করেছে জাতীয় মহান সংসদ ভবন এলাকাকে। আমরা বিশ্বাস করি, এই হীন ঘটনা বিব্রত করেছে সরকারকেও। সরকারের উন্নয়নের অর্জনকে বিনষ্ট করতে এ ঘটনা ভূমিকা রাখছে।

এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা আহত করেছে দেশের ৪৯২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ সকল জনপ্রতিনিধিদের, এ কাণ্ডে তারা বিক্ষুব্ধ হয়েছে। প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে কৃত্রিম ভিডিওর মাধ্যমে নানা অপ-প্রচার চালানো হচ্ছে। প্রকৃত ভিডিওটি মহান জাতীয় সংসদের সার্ভারে সুরক্ষিত রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যেহেতু উভয়ই আওয়ামী লীগ মনোনীত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এ বিষয়ে ঘটনার শিকার মো. আবুল কালাম আজাদ ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বরাবর সুষ্ঠু বিচার চেয়ে আবেদন করেছেন।

‘বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ এসোসিয়েশন’র সভাপতি হারুন-অর রশিদ হাওলাদার বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ, সংগঠন চলবে নিজস্ব বিধিবিধানে। এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, যিনিই হোক রাজনৈতিক সংগঠনকে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক সংগঠন করতে গিয়ে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে লাঞ্চিত করা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না। গত ১৬ জুলাই জাতীয় সংসদ এলাকায় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল কর্তৃক শালীনতা ও মানবতাকে ভুলণ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদকে যেভাবে শারীরিক ও মানসিক লাঞ্চনা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে ‘বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ এসোসিয়েশন’ তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে অচিরেই দোষী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে। আমরা অপেক্ষা করছি এবং চাই মানবতা বিবর্জিত এই ঘটনার দ্রুত শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক সমাধান।

জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদের প্রধান সম্পদ তাদের মর্যাদা; যা আজ আমাদের সহকর্মী লাঞ্চিত হবার মধ্য দিয়ে ভূলণ্ঠিত। দেশের কোনো জনপ্রতিনিধি বা রাজনীতিবিদ এমন কর্মকাণ্ডের কাছে নিরাপদ নয়, এতে শুধু ব্যক্তিগত মর্যাদা নয়, দেবিদ্বারের সকল জনগণের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করেছে, আহত করেছে দলমত নির্বিশেষে। দোষী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণ সময়ের দাবি। যদি আগামী আগস্টের মধ্যে ঘটনার সন্তোষজনক সমাপ্তি না ঘটে তাহলে সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২ সেপ্টেম্বর স্পিকার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বরাবর আনুষ্ঠানিক আবেদন জানানো হবে। ১০ সেপ্টেম্বর দেশের সকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের নিয়ে ঢাকায় সমাবেশ হবে।

এরপরেও যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, কোনো উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের মর্যাদাহানি, অধিকার অবমূল্যায়ন করা হয় তাহলে ব্যক্তিত্ব, আত্মমর্যাদা, সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্ব-স্ব এলাকার জনগণকে অবহিত করে আমরা একযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হবো।

বিষয়টি স্থানীয় রাজনৈতিক কিনা এবং এমপিকে ফাঁসানো হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন-অর রশিদ হাওলাদার বলেন, ‘স্থানীয় রাজনীতি নিয়েই সবাই বসেছিলেন। সংসদ ভবন এমপিদের সুরক্ষিত এলাকা। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে আরেকজন জনপ্রতিনিধিকে আঘাত করা মোটেও সমীচীন নয়।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের কাছ থেকে ঘটনা শুনেই আমরা আজকের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। আমরা চাই সুষ্ঠু সমাধান।

এরপর দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদকে ফোনে লাউড স্পিকার দিয়ে ফোনে কথা বলানো হয়। তিনি বলেন, ওই দিন এমপি নিজেই আমাকে আঘাত করেছেন। বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ এসোসিয়েশনের বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত।

ইউআর/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img