দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিককে মানুষ হিসেবে দেখেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তার মানে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব আমারই।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আরও ২৬ হাজার ২২৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, ‘দলমত নির্বিশেষে যেই গৃহহীন থাকবে আমরা তাদের ঘর করে দেবো। ঘর করে তাদের ঠিকানা দেবো, তাদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দেবো।
দলমত হয়তো ভিন্নতা থাকতে পারে, তাতে কিছু আসে যায় না। দেশটা তো আমাদের।
আর আমি যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তার মানে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব আমারই। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মত ভিন্নতা থাকতে পারে, পথ ভিন্নতা থাকতে পারে, আদর্শ ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু তারপরও মানুষ মানুষই। কাজেই মানুষকে আমি মানুষ হিসেবে দেখি। প্রত্যেকটা মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে সেটাই আমি চাই। আমার বাবার সেটাই শিক্ষা। এ দেশের মানুষের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়ে যেতে চাই। ’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণ করাই আমার লক্ষ্য। সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। বাংলাদেশের মানুষকে যেন সুন্দর জীবন দিতে পারি, সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। ’
প্রতিটি মানুষের আবাসন নিশ্চিত করার প্রত্যয় পুর্নব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের বাংলাদেশে শতভাগ ভূমিহীন-গৃহহীন পুনর্বাসন হবে। প্রত্যেকটা মানুষ তার ঠিকানা পাবে। সেটাই আমরা চাচ্ছি।’
কেউ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকলে তা জানানোর আহ্বান জানিয়ে সরকারি কর্মকর্তাসহ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দেখেন আপনাদের এলাকায় কেউ ভূমিহীন-গৃহহীন আছে কিনা। অন্যান্য দলেরও যারা কারো কাছে যদি খবর থাকে অবশ্যই আমাদের খবর দেবেন। ’
দুটি জেলার সবগুলো উপজেলাসহ সারা দেশের ৫২টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আরও আনন্দিত, আমাদের উদ্যোগের ফলে একটা প্রাথমিক সফলতা আমরা অর্জন করতে পেরেছি। সেটা হলো পঞ্চগড় এবং মাগুরা জেলার সকল উপজেলাসহ সারা দেশের ৫২টি উপজেলা সম্পূর্ণভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হলো। ’
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি প্রত্যেকটা জেলা-উপজেলাকেই ভূমিহীন এবং গৃহহীনমুক্ত করতে পারবো। প্রতিটি মানুষের একটা ঘর থাকবে, তাদের একটা স্থায়ী ঠিকানা থাকবে, তাদের একটা সুন্দর বাসস্থান থাকবে, তারা সুন্দরভাবে বাঁচবে। ’
ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙন কবলিত ভূমি-গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের আওতায় কয়েক লাখ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগীদের মধ্যে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়সহ সমাজের পিছিয়ে পড়া ভাসমান বিভিন্ন জনগোষ্ঠীও রয়েছে।
১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ লাখ ৯ হাজার ৩৭০টি পরিবারকে পুর্নবাসন করা হয়েছে।
১৯৯৭ সাল থেকে আশ্রয়ণ এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়/সংস্থার মাধ্যমে ৭ লাখ ১২ হাজার ২৬৩ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পরিবার প্রতি ৫ জন হিসেবে এতে উপকার ভোগী মানুষের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার ৩১৫ জন।
ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং লক্ষ্মীপুর, বাগেরহাট, ময়মনসিংহ, পঞ্চগড় এবং মাগুরা জেলা থেকে উপকারভোগী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিরা গণভবনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী উপকারভোগী এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
ইউআর/