রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হলো বীর শহীদদের দেহাবশেষ

মিরপুরের বধ্যভূমিতে পাওয়া মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত বীর শহীদদের দেহাবশেষ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে। সোমবার (১১ এপ্রিল) সেইসব বীর শহীদদের দেহাবশেষ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এসময় সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর আইএসপিআর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের অসংখ্য বধ্যভূমিতে বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালায়; এর মধ্যে মিরপুর মুসলিম বাজার বধ্যভূমি অন্যতম। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট রাজাকারদের হিংস্রতা যে কত ভয়াবহ ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে।

ওই বছর ২৭ জুলাই মিরপুর ১২ নং সেকশনের নূরী মসজিদের সংস্কার কাজ করার সময় কূপ খনন করলে ১৯৭১ সালের সেইসব হত্যাযজ্ঞের স্মৃতিচিহ্ন বেরিয়ে আসে। মাথার খুলি ও হাড়গোড়ের সঙ্গে বেরিয়ে আসতে থাকে মানুষের চুলের বেনী, ওড়না, কাপড়ের অংশবিশেষসহ শহীদদের বিভিন্ন ব্যবহার্য সামগ্রী।

সেসময় সেনাবাহিনীর উদ্যোগে মিরপুর থেকে প্রায় ৫ হাজার কঙ্কাল এবং বেশ কিছু খুলি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত হাড় ও খুলিগুলো একাত্তরের গণহত্যার নিদর্শন কিনা তা নিশ্চিত হতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় ‘ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি’। তবে এসব দেহাবশেষের আলাদাভাবে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে দেহাবশেষগুলোর কিছু মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর এবং কিছু সেনাবাহিনীর যাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য প্রদান করা হয়। অবশিষ্ট দেহাবশেষ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সম্মানজনকভাবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হলো।

দেহাবশেষ সমাধিস্থ করার পর সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের অনেক অজানা শহীদরা গণহত্যার শিকার হয়েছিলেন। তাদের সবার প্রতি আমরা যথাযথ সম্মান দেখাতে পারিনি। আজকে আমরা সেই একাত্তরে গণহত্যার শিকার কিছু মানুষের শহীদদের দেহাবশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মানে দাফন করতে পারলাম। আর দায়িত্ব পেয়ে সেনাবাহিনী খুবই গর্বিত। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, ওনার নির্দেশনা এবং গাইডেন্স অনুযায়ী সেনাবাহিনী এ কাজটি করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যেখানেই সুযোগ পাচ্ছে, যেখানে সুযোগ রয়েছে সেখানেই মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে রয়েছি।

কঙ্কাল ও খুলিগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নেতৃত্ব দেন কমিটির প্রধান এবং চিকিৎসক ও গণহত্যা গবেষক ড. এম এ হাসান। তিনি শহীদদের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘অকথ্য নির্যাতনের পর তাদের হত্যা করা হয়েছে। বিভিন্নভাবে… কখনো গুলি করে। মিরপুরে যারা শহীদ হয়েছেন, নিখোঁজ হয়েছেন— তাদের দেহাবশেষ হতে পারে বলেই আমরা এ কাজটি করেছি। আমরা সকল শহীদদের কথা চিন্তা করেছি। এককভাবে কারও কথা চিন্তা করিনি। তাদের আত্মীয়-স্বজনদের ডিএনএ প্রোফাইলিং করেছি। শহীদ লেফটেন্যান্ট সেলিমসহ সুবেদার মোমেন আরও অনেকের আত্মীয়-স্বজন; এসকে লোদী, শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়েসহ অনেকের করা হয়েছে।

এসময় সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

ইউআর/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img