রাজধানীর শাহজাহানপুরে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান জামান প্রীতিকে গুলি করে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন শুটার মো. মাসুম ওরফে আকাশ।
মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তিনি জবানবন্দি দেন। এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় মাসুমকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। আরও জানা গেছে, মাসুম আদালতে টিপুকে গুলি করে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। বন্ধু মোল্লা শামীমের মোটরসাইকেলে করে সেদিন ঘটনাস্থলে যান তিনি। টিপুকে গুলি করে শামীমের মোটরসাইকেলে করে এলাকা ছাড়েন শুটার মাসুম।
গত ২৪ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় সড়কের ওপর প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু। এছাড়া ঘটনাস্থলে একজন নিরীহ কলেজছাত্রী এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হয়। পেশাদার কিলার বাহিনী এক থেকে দেড় মিনিটের অপারেশন শেষে পালিয়ে যায়। ১২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে টিপুর দিকে। এর মধ্যে তার শরীরে সাত রাউন্ড গুলি লাগে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা করেন।
এ ঘটনায় গত ২৭ মার্চ শুটার মাসুমকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।পরদিন আদালত তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠান।রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার। এদিন তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত।
শুটার মাসুম স্বীকার করে বলেছেন, হত্যা মামলাসহ কয়েকটি মামলার আসামি হয়ে তিনি পরিবার থেকে আলাদা ছিলেন। এ নিয়ে হতাশায় ভুগছিলেন তিনি। টিপুকে হত্যা করতে পারলে মামলা থেকে তাকে বাঁচিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।
হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল প্রসঙ্গে মাসুম বলেন- ঘটনার তিন দিন আগে কমলাপুরের ইনল্যান্ড ডিপো এলাকায় অপরিচিত এক ব্যক্তি এসে মাসুম ও তার সহযোগীকে একটি মোটরসাইকেল ও অস্ত্র দিয়ে যায়। ঘটনার আগের দিনও এজিবি কলোনিতে গিয়ে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় ফিরে আসে মাসুম ও তার সহযোগী। পরে ২৪ মার্চ রাতে কিলিং মিশন শেষ করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে সেই অস্ত্র ও মোটরসাইকেল ওই ব্যক্তির কাছে জমা দেন।
এর আগে হত্যা মামলার তদন্তে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেছিলেন, টিপুকে হত্যার জন্য পাঁচ দিন আগে মাসুমকে ভাড়া করা হয়।
এদিকে গত ২ এপ্রিল এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও ১০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক (৫২), পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), মো. নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির (৩৮) এবং মো. মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশকে (৫১) গ্রেফতারের কথা জানায় র্যাব। এ সময় উদ্ধার করা হয় নজরদারির কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল এবং হত্যার জন্য দেওয়া ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য সামগ্রী। গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩ এই গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করে।
ওইদিন দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু খুনের পরিকল্পনা হয় দুবাইয়ে। পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন বিদেশে পলাতক কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী। খুনের দর হাঁকা হয় ১৫ লাখ টাকা। শেষমেশ এই দরেই দফারফা হয়। দেশে বসে খুনের বাস্তবায়ন করে পেশাদার কিলারচক্র। হত্যার আগে ও পরে টিপুর গতিবিধি রেকির আপডেট মেসেজ আদান-প্রদান করে মাস্টারমাইন্ড ওমর ফারুকসহ তার সহযোগীরা।
আসামি চারজনই ২০১৩ সালে হত্যার শিকার যুবলীগ নেতা মিল্কীর অনুসারী বলে জানিয়েছে র্যাব। মতিঝিল এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে হত্যার পরিবর্তে হত্যার রাজনীতি থেকেই এ খুন হয়েছে বলে জানায় র্যাব।
ইউআর/