আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই হিন্দুদের পাশে দাঁড়িয়েছে: তথ্যমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে, অন্যকোনো দল দাঁড়ায়নি। একইসাথে ঘটনাটি যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার দায় এড়াতে পারে না।

রোববার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সম্পাদক ফোরামের সাথে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি একথা বলেন। সচিব মো: মকবুল হোসেন এসময় উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদক ফোরামের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রতন, মহাসচিব ফারুক আহমেদ তালুকদার ও সদস্যদের মধ্যে দুলাল আহমেদ চৌধুরী, বেলায়েত হোসেন, শরীফ সাহাবুদ্দিন, মফিজুর রহমান, উপদেষ্টা আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া সভায় যোগ দেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কুমিল্লার ঘটনার পরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা প্রত্যেকটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছিলাম যাতে দুর্গাপূজা চলাকালীন পূজামন্ডপে আমাদের দলের লোকজন থাকে এবং কেউ কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে। আমাদের নেতাকর্মীরা সেইভাবে ছিল। যারা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে তাদের আরো বড় পরিকল্পনা ছিল, আমাদের দল হিন্দুদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিধায় ষড়যন্ত্রকারীরা তা করতে পারেনি। কয়েক ঘন্টার নোটিশে আমাদের দল সারাদেশে শান্তি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। আমরা এখনো সতর্ক দৃষ্টি রাখছি।

‘আমরাই শুধু পাশে দাঁড়িয়েছি, বাকিরা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা এমনকি গয়েশ্বর বাবুসহ অন্যরা শুধু টেলিভিশনের সামনেই গলা ফাটান, মানুষের পাশে দাঁড়াননি, বরং তারা এই ঘটনা ইন্ধন দিয়েছে এবং সমুদ্রের ওপার থেকে এই ঘটনার পরিকল্পনা হয়েছিল’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।

সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ১০২টি মামলা হয়েছে, ৬শ’ মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে। রংপুরের পীরগঞ্জে কয়েক দিনের মধ্যে সবার ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবার এক লাখ টাকার বেশি নগদ সহায়তা পেয়েছে। অন্যান্য জায়গায় যে কয়েকটি মন্দিরে হামলা হয়েছে, সেগুলো মেরামতের জন্য সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে বা যারা ঘর হারিয়েছে সবার ঘর করে দেয়া হবে।

সম্পাদক ফোরাম সদস্যদের বক্তব্য ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরণের প্রচারণার ফলে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়’ এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, কুমিল্লার ঘটনাটি যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড না হতো তাহলে এই ঘটনা বিস্তৃত হয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। রংপুরের পীরগঞ্জের ঘটনাও সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্টের কারণে। ফেইসবুকের পোস্টের কারণেই এটি হয়েছে এমন নয়। তবে অবশ্যই ফেইসবুকে যদি এই পোস্ট না যেতো তাহলে এই পরিস্থিতি হতো না। এটার সাথে যারা যুক্ত ছিল সবাই দায়ী। যে কোরআন শরিফ রেখে এসেছে, যে প্ররোচনা দিয়েছে, যারা একটি পোস্টের প্রেক্ষিতে যাচাই বাছাই না করে সমাজে হানাহানি তৈরি করলো, তারা সবাই দায়ী। এবং একইসাথে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষও দায়ী কারণ তাদের মাধ্যম ব্যবহার করে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছে, এখানে তারা দায় এড়াতে পারে না। অতীতেও নাসিরনগরে, কক্সবাজারে রামুতে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেখানেও সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করা হয়েছে।

এসময় সাংবাদিকরা সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে চায় কি না এ প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা অবশ্যই কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না। কিন্তু সবকিছুই এমনভাবে পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন সেটি যাতে খারাপ কাজে ব্যবহৃত না হয়। সেখানে যাতে স্বচ্ছতা থাকে। ফেইসবুকে পরিচয় গোপন করে ফেইক আইডি দিয়ে পোস্ট দেয়া হয়, তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এটির তো প্রতিকার হওয়া দরকার। সামাজিক মাধ্যম আজকের পৃথিবীর বাস্তবতা। এটির অনেক ভালো দিক আছে। এটির যে খারাপ দিকগুলো এটি যাতে দূরীভূত হয়, সেজন্য ফেইসবুক কর্তৃপক্ষের অবশ্যই দায় আছে, আমরা সেটিই বলতে চাচ্ছি। সরকারের পক্ষ থেকে অনেক আগেই সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল বাংলাদেশে যেন আইডি কার্ড দিয়ে ফেইসবুক একাউন্ট খুলতে পারে। কিন্তু ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি।

এর আগে মন্ত্রী সভায় জানান, অনিয়মিত অনেকগুলো দৈনিক পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আরো অন্তত ২শ’ পত্রিকা যেগুলো বের হয় না, সেগুলোর ব্যাপারেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের বকেয়া বিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংবাদপত্র যদি সঠিকভাবে বিল না পায় তাহলে তাদের পক্ষে সংবাদপত্র পরিচালনা করা, সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক, কর্মচারিসহ সবার বেতনভাতা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং এটি যাতে না হয় সেটি আমরা খেয়াল রাখছি।

সভাশেষে তথ্যমন্ত্রী সিনিয়র সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়ার ‘বঙ্গবন্ধু জীবনই বাঙালি জাতির রাষ্ট্রবিজ্ঞান’ এবং সাংবাদিক জান্নাতুল বাকেয়া কেকা’র ‘বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় নারী উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ গ্রন্থ দু’টির মোড়ক উন্মোচন করেন।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img