চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, চারিদিকে নাগিনীরা বিষাক্ত নি:শ্বাস ফেলছে। বাঙালি জাতিসত্তার শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আঘাত করতেই বারবার সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা সৃষ্টি করে সম্প্রীতির পরিবেশ ক্ষুন্ন করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে।
যারা এই অপকর্মের সাথে যুক্ত তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে সংগঠনের তৃণমূল স্তরকে সুসংহত ও সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে। আজ মঙ্গলবার সকালে নগরের ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূল স্তরের প্রতিনিধিত্ব মূলক বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের আস্থা ও ভরসার প্রতীক। এই অহংকার কোনদিন চূর্ণ হবে না। যে কোন মূল্যে অহংকারকে ধরে রাখতে হবে। কারণ অশুভ শক্তি অশনি সংকেত বার্তা ছড়াচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির মধ্যে বিভাজন ও বিভক্তির কারনেই ১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতাসীন হয়।
ফলে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির রাজনৈতিক উত্থান ঘটেছিল। এটাই ছিলো বাঙালি জাতি সত্তার বিরুদ্ধে বড় অপঘাত। এই অপঘাতের শিকড় আরো গভীরে যাবার আগে উপড়ে না ফেলতে পারলে জাতীয় অস্তিত্বের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে না। তাই এখন থেকেই তৃণমূল পর্যায়ে জাতীয় অস্তিত্ব সুরক্ষায় অগ্রবর্তী বাহিনী গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাদের গৌরব, অহংকার ও বিশ্বাসের জায়গা। এই জায়গাটির সুরক্ষা হলেই আমাদের মান-সম্মান ও প্রাণের সুরক্ষা হবে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, প্রত্যেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর অনেক অনেক ত্যাগের ফলে দল আজ টানা তিন বার ক্ষমতায় এবং বড় বড় অর্জন সম্ভব হয়েছে। তবে এতে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই।
মনে রাখা উচিত এক মণ দুধ মাত্র এক চিমটে তেতুলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই নেতাকর্মীদের সামান্য ভুলে বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তিনি ঘোষণা করেন, কেউ ইচ্ছে করলেই পদ-পদবী পেতে পারেন না, জন ও কর্মী সম্পৃক্ততা না থাকলে কেউ নেতা হতে পারবে না। আমিও যদি চাই তাও সম্ভব নয়, নেত্রী যদি না চান কখনও সেই ইচ্ছা পূর্ণ হবে না। তাই পদ-পদবীর জন্য ধাক্কাধাক্কি ও প্রতিযোগিতা এবং পারস্পরিক চরিত্র হননের কোন প্রয়োজন নেই।
তিনি আরো বলেন, লিয়াকত আলী হত্যাসহ কোন হত্যার সাথে যুক্ত কারও আওয়ামী লীগে জায়গা হবে না। যারা জায়গা দেবেন তাদেরও দল থেকে সরে যেতে হবে। তিনি জানান, সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ধারা, উপ-ধারা অনুসরণ করেই তৃণমূল স্তরের কমিটিগুলো গঠিত হবে। ১৬ নভেম্বর থেকে মহানগর আওয়ামী লীগ নির্ধারিত তারিখ ও স্থান অনুযায়ী প্রথমে ইউনিট সম্মেলন হবে এবং তিনটি করে ইউনিট সম্মেলন শেষ হলে ওয়ার্ড সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
বর্ধিত সভার বিরতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সম্প্রতি ও শান্তি র্যালি আইসিসি কনভেশন সেন্টার থেকে বেরিয়ে কাজী দেউরী, আসকার দিঘীর পাড়, জামালখান প্রেস ক্লাব হয়ে আবার বর্ধিত সভা স্থলে ফিরে আসে।
সভায় ইতোমধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগ হতে সরবরাহকৃত তথ্য সংগ্রহ ফরম পূরণ পূর্বক মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগামী ২৯ অক্টোবরের মধ্যে জমা প্রদানের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
এছাড়া আগামী ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস ৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংসদ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুবার্ষিকী পালন এবং ৫ নভেম্বর আন্দরকিল্লা চত্বরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দেন।
সভার শুরুতে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ পরিবারের যারা শাহাদাৎ বরণ করেছেন, জেলখানায় জাতীয় চার নেতা ও চট্টগ্রামে প্রয়াত সকল নেতৃবৃন্দের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং করোনাকালীন সময়ে মহানগর আওয়ামী লীগের যে সকল নেতাকর্মীরা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মুনাজাত করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম ফারুক এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত তৃণমূলের বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি আলহাজ্ব নঈম উদ্দিন চৌধুরী, এড. সুনীল সরকার, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলহাজ্ব খোরশেদ আলম, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব বদিউল আলম, উপদেষ্টা আলহাজ্ব শফর আলী, শেখ মো. ইসহাক, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, হাসান মাহমুদ সমশের, এড. শেখ ইফতেখার সায়মুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, আহমেদুর রহমান ছিদ্দিকী, হাজী মোহাম্মদ হোসেন, হাজী জহুর আহমেদ, মাহবুবুল হক মিয়া, জোবায়েরা নার্গিস খান, দিদারুল আলম চৌধুরী, জালাল উদ্দিন ইকবাল, আবদুল আহাদ, মোহাম্মদ আবু তাহের, ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, মো. শহিদুল আলম, নির্বাহী সদস্য এম. এ জাফর, মো. আবুল মনছুর, আলহাজ্ব পেয়ার মোহাম্মদ, সৈয়দ কামরুল হাসান বুলু, গাজী শফিউল আজিম, বখতেয়ার উদ্দিন খান, এড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, মোহাব্বত আলী খান, সৈয়দ আমিনুল হক, ইঞ্জিনিয়ার বিজয় কিষাণ চৌধুরী, জাফর আলম চৌধুরী, হাজী দোস্ত মোহাম্মদ, আবদুল লতিফ টিপু, রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ, ড. নেছার উদ্দিন মঞ্জু, হাজী বেলাল আহমেদ, মোরশেদ আকতার চৌধুরী সহ ১৫ থানা, ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহবায়ক, যুগ্ম আহবায়ক সহ ১২৯টি ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকগণ এ তৃণমূল বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ২১ অক্টোবর থেকে ১০ দিন পর্যন্ত প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ে শান্তি ও সম্প্রতি কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়।
বর্ধিত সভায় অংশ গ্রহণকারীদের দলীয় সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি পালনে শপথ বাক্য পাঠ করান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন।