যারা রয়েছেন তালেবান সরকারে

আগস্টে মাত্র ১০ দিনে যেভাবে তালেবান পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, তা অনেককে অবাক করে দিয়েছে।  আফগানিস্তানকে ‘ইসলামিক আমিরাত’ ঘোষণা করার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। 

তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় রয়েছেন বা যার ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

নতুন তালেবান সরকারে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়-
১. হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা
২০১৬ সালের মে মাস থেকে তালেবানের ‘সুপ্রিম লিডার’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা।  তালেবান ঘোষিত ‘ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তান’-এর তিনি শীর্ষ নেতা।
আশির দশকে তিনি আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন।  তবে সামরিক কমান্ডারের তুলনায় একজন ধর্মীয় নেতা হিসাবেই তার পরিচিতি বেশি।  নব্বইয়ের দশকে শরিয়া আদালতের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আখুন্দজাদা। 

১৯৯৬ সালে প্রথমবার তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তালেবান তাদের মতো করে ধর্মীয় আইনকানুন চালু করে।  সেই সময় হত্যাকারী ও ব্যভিচারীদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো এবং চোরদের হাত কেটে ফেলা হতো।  তখনকার তালেবান নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের (ধারণা করা হয় তিনি ২০১৩ সালে মারা গেছেন) নেতৃত্বে তালেবান টেলিভিশন, সংগীত, চলচ্চিত্র নারীদের মেকআপ বা রূপসজ্জার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।  ১০ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের স্কুলে যাওয়াও তারা নিষিদ্ধ করেছিল। 
হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার বয়স ৬০ বছর বলে ধারণা করা হয়।  তার জীবনের বেশির ভাগ সময় আফগানিস্তানে কাটিয়েছেন।  তালেবানের সুপ্রিম লিডার হিসেবে তিনি রাজনৈতিক, সামরিক এবং ধর্মীয় সব বিষয়ের শীর্ষ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 
২. প্রধানমন্ত্রী: মোল্লাহ মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ
১৯৯৪ সালে যে চারজন মিলে আফগানিস্তানে তালেবান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, মোল্লাহ মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ তাদের একজন।  তিনি সবচেয়ে বেশিদিন ধরে তালেবানের নেতাদের কাউন্সিল বা রেহবারি শুরার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।  ১৯৯৬-২০০১ সালে তালেবানের প্রথম দফার দায়িত্ব পালনের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।  ওই সময়ে তালেবান সরকারে দায়িত্ব পালন করার কারণে তার ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। 
৩. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: সিরাজুদ্দিন হাক্কানি
এই গ্রুপের আরেকজন শীর্ষ নেতা হচ্ছেন সিরাজুদ্দিন হাক্কানি, যিনি এফবিআইয়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় রয়েছেন।  পিতা জালালুদ্দিন হাক্কানির মৃত্যুর পর তিনি হাক্কানি নেটওয়ার্কের নতুন নেতা হন।  আফগানিস্তানে আফগান বাহিনী এবং তাদের পশ্চিমা মিত্রদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ কিছু হামলার জন্য তাকে দায়ী করা হয়।  তার বয়স ৪৫ বছর। 
হাক্কানি নেটওয়ার্ক হচ্ছে ওই এলাকার সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ভীতিকর জঙ্গি গ্রুপ।  অনেকে মনে করেন, আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট গ্রুপের চেয়ে তারা বেশি প্রভাবশালী।  যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় থাকা এই গ্রুপটি আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে তালেবানের আর্থিক ও সামরিক সম্পদের তত্ত্বাবধান করে থাকে। 
৪. উপপ্রধানমন্ত্রী: আবদুল গনি বারাদার
মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদার তালেবানের একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা।  ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর অভিযানে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি তাদের একজন প্রধান ব্যক্তিতে পরিণত হন।  তবে ২০১০ সালে একটি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান যৌথ অভিযানে তিনি করাচি থেকে গ্রেপ্তার হন। 
পরবর্তী আট বছর ধরে তিনি কারাগারে বন্দি থাকেন।  দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ার পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। 
২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে কাতারের দোহায় চালু করা তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরের প্রধান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।  তালেবান নেতা হিসেবে ২০২০ সালে প্রথম বারাদার যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। 
তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল তিনি নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন।  কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে দেখা গেল তিনি উপপ্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। 
বারাদার ছাড়াও এই অন্তর্বর্তী সরকারে আরও একজন উপপ্রধানমন্ত্রী আছেন।  তিনি হচ্ছেন মৌলভি আবদুল সালাম হানাফি। 
৫. প্রতিরক্ষামন্ত্রী: মোহাম্মদ ইয়াকুব
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লাহ ওমরের সন্তান হচ্ছেন মোহাম্মদ ইয়াকুব।  তার বয়স ৩০ বছরের কিছু বেশি।  তিনি বর্তমানে দলের সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 
২০১৬ সালে তখনকার তালেবান নেতা আখতার মানসুর নিহত হওয়ার পর তালেবানের একটি অংশ ইয়াকুবকে তালেবানের সুপ্রিম লিডার হিসেবে মনোনীত করতে চান।  তবে অন্যরা মনে করেছেন, সেই দায়িত্ব পালনে তার বয়স কম এবং অনভিজ্ঞ। 
এপির তথ্য অনুযায়ী, তালেবান যখন পুরো আফগানিস্তানজুড়ে নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছিল, মি. ইয়াকুব তালেবান যোদ্ধাদের আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা আফগান সামরিক বাহিনী বা সরকারের কর্মকর্তাদের কোনো ক্ষতি না করে।  সেই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ফেলে যাওয়া বাড়িঘর লুটতরাজ করা না হয়, সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন। 
তালেবানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আরও রয়েছেন- 
পররাষ্ট্রমন্ত্রী: মৌলভী আমির খান মুত্তাকি

অর্থমন্ত্রী: মোল্লাহ হিদায়াত বদ্রী

বিচারমন্ত্রী: আবদুল হাকিম ইশাকজি

তথ্যমন্ত্রী: খাইরুল্লাহ সাইদউয়ালি খয়েরখা

সূত্র: বিবিসি বাংলা

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img