সরকারি কর্মকর্তাদের স্যার ম্যাডাম বলার রীতি নেই: জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বলতে হবে এমন কোনো রীতি নেই বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত বিএসআরএফ সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা যেটি মেনে চলবে- স্যার, ম্যাডাম বা এমন কিছু সম্বোধন করতে হবে এমন কোনো রীতি নেই। স্যার মানে মহোদয়। রুলস অব বিজনেসে এটা নাই। কেউ সেবা নিতে গেলে যদি তাকে অভ্যর্থনা জানানো না হয়, সেটাই অন্যায়। কেউ সেবা নিতে গলে যদি আপনার মাঝে ওয়েলকামিং এটিচিউড না থাকে, আপনি তিরস্কার বা রেগে থাকেন- এগুলো দুর্নীতি। দুর্ব্যবহার দুর্নীতির শামিল। এটা করা যাবে না। আইনের মধ্য থেকে সাধ্য মতো সেবা দিতে হবে। কর্মকর্তাদের জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে হবে। কর্মকর্তাদের মনে রাখতে হবে আপনার আচরণ সরকারের আচরণ। আপনার আচরণ সরকারের আচরণ। সবাই মনে করে আপনার অফিস প্রধানমন্ত্রীর অফিসের একটি অংশ। আমাদের জাতির পিতার নির্দেশনা কী ছিল? যারা তোমাদেরর কাছে সেবা নিতে আসে তাদের দিকে তাকাও তারা তোমার ভাইয়ের মতো, বাবার মতো, আত্মীয়ের মতো। যারা সেবা দিতে আসে তারা জনগণ, জনগণের সেবক হও। জনগণের টাকায় তোমার বেতন হয়।

বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকের সঞ্চালনায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. শাহেনুর মিয়া বক্তব্য দেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমি নিজেও কর্মকর্তাদের অনুপ্রাণিত করি। মাঠ প্রশাসনের প্রধান বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে নির্দেশনা দেই। তারা অ্যাসিল্যান্ড থেকে শুরু করে ইউএনওদের নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করছেন। তারা প্রতিদিন তাদেরকে এই বার্তাগুলো দিচ্ছেন যে জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে হবে। আমরা জনমুখী জনপ্রশাসন বলতে ওইটাই বলেছি। সেক্ষেত্রে এখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।

সম্প্রতি মাঠ প্রশাসনে এক কর্মকর্তাকে স্যার সম্বোধন না করায় উদ্ভুত পরিস্তিতি নিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি জায়গায় একটি ঘটনা ঘটেছিল, সেখানেও আমরা দেখেছি আশেপাশে যারা ছিল তাদের অতি বাড়াড়িতে এমনটি হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘এমনও নজির আছে, একজন ইউএনও যখন চলে যায় তখন কিন্তু মানুষ কাঁদে। বহুদিন তাকে মনে রাখে। সব গুণাবলি যেন থাকে, তারা যেন অতি মানবিক হয়।’

বর্তমান সরকারের মেয়াদে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (আড়াই বছরের বেশি সময়, প্রায় ৩২ মাস) প্রশাসনের ৫৫ জন কর্মকর্তাকে লঘু ও গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য ৪৯টি মামলা চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ে ব্যাপকভাবে পদ সৃজন করেছি। পদ সৃজনের কাজটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় করে থাকে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমরা প্রশাসনে এক লাখ ৪০ হাজার ৮৬০টি পদ সৃজন করেছি। নিয়োগের জন্য ৭ হাজার ৯৪৮টি পদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। চার হাজার ৭২৬টি যানবাহন টিও অ্যান্ড ই-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ৪৮ হাজার ৫১০টি পদ বিলোপে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়েছে। এই সময়ে ৩৭তম বিসিএসের মাধ্যমে এক হাজার ৪৯টি, ৩৮তম বিসিএসের মাধ্যমে দুই হাজার ৩৪টি ও ৩৯তম বিসিএসের মাধ্যমে ছয় হাজার ৭২৭টিসহ মোট ১০ হাজার ১১০টি পদে ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যাডার সার্ভিসের পাঁচ হাজার ৭৪৪ জনকে দেশে ও ৪৭৭ জন কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিসিএস প্রশাসন একাডেমির প্রশিক্ষণ মডিউল যুগোপযোগী করেছি।

ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা ব্যবহার করে দ্রুত কাজ করার জন্য ১৯টি সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হচ্ছে জানিয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৮০৩টি আইন ও বিধিবিধানের বিষয়ে বিধিগত মতামত প্রদান করেছি ও ৪৮৪টি নিয়োগবিধি প্রবিধানের সংশোধনও করা হয়েছে এই সময়ের মধ্যে।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img