পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন স্বল্পোন্নত দেশসমূহ (এলডিসিএস) এবং এলডিসি থেকে যেসব দেশ উত্তরণ করছে- তাদের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থিত একটি নতুন কাঠামোর পাশাপাশি শক্তিশালী নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি চার দিনব্যাপী উচ্চ-পর্যায়ের এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিওনাল রিভিউ সভার উদ্বোধনী অধিবেশনে এ কথা বলেন।
জানুয়ারিতে কাতারে অনুষ্ঠেয় ইউএনএলডিসি-৫ এর ওপর ফিফথ ইউএন কনফারেন্সের প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে সোমবার জেনেভাস্থ জাতিসংঘের সদরদপ্তরে সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ সরকার, ইউএন-ওএইচআরএলএলএস ও ইউএন-ইএসসিএপি ও ইউএন-ইএসসিএপি।
ড. মোমেন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের এলডিসিএসভুক্ত অধিকাংশ দেশের অসামান্য অগ্রগতি, বিশেষত দারিদ্র দূরীকরণ ও মানব সম্পদ ও অবকাঠামো উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল, সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশটির উত্তরণের কথা তুলে ধরেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্রের হার হ্রাস পেয়ে ২০.৫ শতাংশে এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা। সম্মেলনে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সভাপতি ভলকান বোজকির, ইসিওএসওসি সভাপতি কোলেন ভিক্সেন কেলাপাইল, এলডিসিএস এর চেয়ার মালাওই’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইসেনহাওয়ার কাকা এবং তুরস্কের ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার ফারুক কায়মাকসি ও আরো কয়েকজন উচ্চ-পর্যায়ের ব্যক্তি বক্তব্য প্রদান করেন।
ড. মোমেনও ‘মিনিস্টারিয়াল ডায়লগ অন লেসনস লারনড ইন দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব দ্য আইপিওএ-চ্যালেঞ্জেস এনকাউন্টার্ড অ্যান্ড দ্য ওয়ে ফরেয়ার্ড’ শীর্ষক আঞ্চলিক পর্যালোচনা সভার একটি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)’র মহাপরিচালক ডা. টেড্রোস আডানোম গেব্রেইসুস, ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়েল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও)’র মহাপরিচালক ড্যারেন টাং ও শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডির সাথে জেনেভায় তাদের অফিসে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ডা. টেড্রোসের সাথে বৈঠককালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সমতার ভিত্তিতে সুলোভমূল্যেকোডিভ-১৯ (করোনা ভাইরাস)-এর ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ডব্লিউএইচও’র আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের ওপর জোর দেন।
এছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন, ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি উৎপাদানের উপর থেকে টিআরআইপিএস বাধ্যবাধগতার অস্থায়ীভাবে তুলে নেয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও তুলে ধরেন। এ সময় তিনি ডব্লিউএইচও এর ডিজি’র কাছে মহামরির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাকসিন ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামদি উৎপাদনে বাংলাদেশের স্বক্ষমতার ব্যাপারে অবহিত করেন।
ড. মোমেন তাকে বাংলাদেশের গণ-স্বাস্থ্যের ওপর কমিউনিটি ক্লিনিকের উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব- বিশেষত শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য এবং জাতীয় স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ব্রিফ করে এ ধরণের আরো ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা ডব্লিউএইচও’র সহায়তা কামনা করেন।
বৈঠককালে বাংলাদেশী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডব্লিউএইচও এর ডিজি উভয়েই স্বাস্থ্যখাতের মূলধারায় মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম ইস্যুটি নিয়ে আসায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ডব্লিউএইচও’র এডভাইসরি প্যানেলের সদস্য সায়মা ওয়াজেদের ব্যক্তিগত উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ইউএনএইচসিআর-এর মহাপরিচালক ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির সাথে বৈঠককালে ড. মোমেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের টেকসই ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগে ইউএনএইচসিআর এর সমর্থন কামনা করেন। এ সময় ফিলিপ্পো বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বিশেষত বাংলাদেশে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় প্রদান করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
ডব্লিউআইপিও’র ডিজি’র সাথে বৈঠককালে ড. মোমেন এলডিসি অবস্থান থেকে বাংলাদেশের নির্বিঘ্ন উত্তরণে এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে ডব্লিউআইইপিও’র বিশেষ সমর্থন ও সহায়তা কামনা করেন। তিনি বাংলাদেশের আইপি খাত জোরদারে ডব্লিউআইইপি’র সহায়তা চান। এ সময় বাংলাদেশী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডব্লিউআইপিও ডিজি টাং একমত হন যে- বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ উন্নয়নের একটি হাতিয়ার হওয়া উচিৎ। এটিকে এসএমইএস, নারী উদ্যোক্তা ও যুবকদের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করা উচিৎ।
রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা ও নিউইয়র্কে জাতিসংঘে কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি বব রাই এলডিসি-৫ প্রায়োরিটি কমিটি ব্যুরো’র কো-চেয়ার নির্বাচিত হয়েছেন। এই কমিটি এলডিসি-৫ সম্মেলন প্রস্তুতির নেতৃত্ব দেবে।
কো-চেয়ার হিসেবে, বাংলাদেশের টেকসই উত্তরণ ও উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তাসহ সামনে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পাবে।