রোববার সন্ধ্যা। এজমারি আহমাদি প্রতিদিনের মতো কাবুলে তার বাসায় ফিরেছেন। চঞ্চল শিশুরা বাসায় তার অপেক্ষায় ছটফট করছিল। তিনি বাসায় ফিরলে রোজই তার ছেলে-মেয়ে ও ভাগনা-ভাগনিরা তাকে নিয়ে মেতে ওঠে।
খাজা বুরগা পাড়ায় তিনি তার সাদা সেডান গাড়িটি রেখে বড় ছেলের কাছে চাবিটি দিয়ে পার্ক করতে বলেন। আফগানিস্তানের রাজধানীর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি ঘনবসতিপূর্ণ পাড়া খাজা বুরগা। শিশুরা গাড়ির চারপাশে জড়ো হন। গাড়ি পার্কিং রোমাঞ্চকর কিছু বলে মনে করে তারা হৈচৈ করছিল।
এজমারি পাশে দাঁড়িয়ে শিশুদের তাল-বাহানা দেখছিলেন। ওদের কাণ্ডকারখানায় তিনিও মজা পাচ্ছিলেন। তখন আফগানিস্তানের নীল আকাশ থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র এসে গাড়িতে আঘাত হানে। মুহূর্তেই হাস্যোজ্জ্বল ১০টি প্রাণ দুনিয়া থেকে মুছে যায়।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা বিমান হামলা চালিয়ে বিস্ফোরক-বোঝাই একটি যান ধ্বংস করে দিয়েছে। কাবুলে আইএসের গাড়িবোমা হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে।
সোমবার জানা গেল, তারা এক ভয়ঙ্কর রক্তক্ষয়ী ভুল করেছে। এজমারির ভাই আইমাল আহমাদি বলেন, আমাদের ঘরের ভেতরে খেলাধুলারত শিশুদের ওপর এসে মার্কিন রকেট আঘাত হেনেছে। তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ অপরাধ তো দূরের কথা, দুনিয়া সম্পর্কে তাদের স্বচ্ছ জ্ঞানও ছিল না।
এক বিমান হামলায় একটি পরিবারের ১০ সদস্য নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে আইমালের শিশুকন্যাসহ আরও পাঁচটি শিশু আছে। সোমবার ঘটনাস্থলে যান ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির সংবাদকর্মীরা। তারা গিয়ে দেখেন পরিবারের নিহত সদস্যদের দাফন করতে স্বজনদের অপেক্ষায় ছিলেন আইমাল।
ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে বলছিলেন, চারটি শিশুসহ আমার ভাই নিহত হয়েছেন। আমি আমার ছোট মেয়েকে হারিয়েছি। মার্কিন সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র বিল উরবান বলেন, কাবুলের একটি গাড়িতে আমাদের বিমান হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের নিহত হওয়া নিয়ে আমরা অবগত।
নিহত এজমারি ছিলেন একজন প্রকৌশলী। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। সাধারণ আফগানদের মতো তিনিও এই কঠিন সময়ে পরিবারের উপার্জন নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।
২০০৯ ও ২০২০ সালের মধ্যে আফগানিস্তানে ৩৮ হাজার বেসামরিক আফগান নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের আফগান সহায়তা মিশন এমন তথ্য দিয়েছে। এছাড়াও আহত হয়েছেন ৭০ হাজার বেসামরিক নাগরিক।
রোববার বিস্ফোরণের পর পাড়ার লোকজন ঘটনাস্থলে এসে জড়ো হন—কী ঘটছে তা দেখার জন্য। তাদের মধ্যে সাবির নামের একজন বলেন—গাড়ির মধ্যে থাকা সবকটি শিশু নিহত হয়েছে। আর বাইরে থাকা বয়স্কলোকজনও প্রাণে রক্ষা পাননি। গাড়িটি ভস্মীভূত হয়ে গেছে। শিশুদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের খোঁজ পাওয়া আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
এক বিবৃতিতে মার্কিন মুখপাত্র বলেন, নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানিতে আমরা গভীরভাবে দুঃখিত। কিন্তু এসব ফাঁপা বুলিতে মন ভরছে না আফগানদের। রশিদ নুরী নামের একজন বলেন, তালেবান আমাদের মারছে, আইএস মারছে। আমেরিকাও আমাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। আপনি কি শিশুদেরও সন্ত্রাসী বলে মনে করেন?