বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করলেও কখনো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি চালাননি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এমন নজির কেউ দেখাতে পারবেন না।
রাজধানীর কৃষিবিদ মিলনায়তনে মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) সকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সরকারপ্রধান এসব কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে জিয়াউর রহমানের দায়িত্ব পালনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে খালেদ মোশাররফ আহত হয়ে গেল। জিয়াকে সেক্টর কমান্ডার করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কখনো গুলি চালিয়েছে এমন কোনো নজির নেই। এমন নজির কেউ দেখাতে পারবেন না।’
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জিয়াউর রহমানকে খুনিচক্রের ‘শক্তির মূল উৎস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন শেখ হাসিনা। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেয়া বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল রশিদ ও ফারুকের সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই ইন্টারভিউতে তারা স্বীকার করেছে। অনেক পত্রিকাতে তাদের বক্তব্য এসেছে যে জিয়াউর রহমান এই খুনিদের সঙ্গে সব সময় ছিল। জিয়াউর রহমানই ছিল মূল শক্তির উৎস। সে বেইমানিটা করেছে।’
জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীতে বঙ্গবন্ধুই প্রমোশন দিয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর মাত্র তিন বছরের মধ্যে মেজর থেকে তাকে প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করা হয়েছিল। সেটাও করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ৭৫-এর পরে যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করে, সেখানে যেমন আমাদের দলেরও কিছু বেইমান, মুনাফেক, মীরজাফর ছিল, ছিল খন্দকার মোশতাক গং। তাদের শক্তিটা ছিল জিয়াউর রহমান।’
১৫ আগস্টের পর যে ভূমিকা নেয়ার কথা ছিল, সেটা কেউ নেয়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার লাশ, সকলের লাশ ১৬ তারিখ পর্যন্ত ওই ৩২ নম্বরেই ছিল। দাফন-কাফনের ব্যবস্থাটুকু পর্যন্ত করা হয়নি।’
সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারীদের প্রত্যেকেই চেনা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এমন মাস নেই জিয়াউর রহমান তার বউকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে না আসত, কর্নেল নূর আসত, ডালিম সারা দিন তার বউ-শ্বাশুড়ি আমাদের বাড়িতে পড়ে থাকত, মোশতাক তো মন্ত্রী ছিল। এত বড় একটা বেইমানি তারা করল!’
অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছেন বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছে, সেই মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে, হাজার হাজার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নির্বিচারে যে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এমন এমন রাত গেছে যে জোড়ায় জোড়ায় ফাঁসি হয়েছে, ১০ জন, ২০ জন এ রকম করে একেক রাতে ফাঁসি, শত শত লোকদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে। কে দিয়েছে? জিয়াউর রহমান দিয়েছে। শুধু ঢাকা জেলে না, রাজশাহী, বগুড়া, খুলনা বিভিন্ন জায়গায় এই হত্যাকাণ্ড সে চালিয়েছে।’
নিজের বক্তব্যে ১৫ আগস্টের পটভূমিও তুলে ধরেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘মূলত ৭ মার্চের ভাষণই ছিল স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষণা এবং গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশনা। কিন্তু যখন তারা হামলা চালাল, তখন তিনি ঘোষণাটা দিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সব প্রস্তুতি তিনি নিয়ে রেখেছিলেন। সেই সময় যারা স্থানীয় দালাল চক্র, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর, তারা কখনও চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক। তারপর যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, বিজয় অর্জন করল, তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজিত হল, তখন সে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই ৭৫ এর ১৫ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল।’
জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ছাত্রসমাজকে ধ্বংস করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এদেশে সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত হোক জাতি, তারা কখনও চায়নি। অবশ্য চাইবে কেমন করে? নিজেদের কী অবস্থা সেটাও তো দেখতে হবে। তার স্ত্রী খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় আসে তখন তিনিও হুমকি দিয়েছিল আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করতে নাকি তার ছাত্রদলই যথেষ্ট। কারণ ছাত্রদলের হাতে তারা অস্ত্র তুলে দিয়েছে। লেখাপড়া শিখতে তাদের উৎসাহিত করে নাই।’
এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি। সেই শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি নিয়ে ছাত্রলীগের তৈরি হতে হবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।’