এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার জোর প্রস্তুতি, মানবণ্টন ও কেন্দ্র যে প্রক্রিয়ায়

দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমলে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা, আর ডিসেম্বরে হবে এইচএসসি। চলতি বছর সংক্ষিপ্ত আকারে ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু হবে এসএসসি এবং এইচএসসি শুরু হবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে কেন্দ্রের বেঞ্চগুলোতে ইংরেজি বর্ণ ‘জেড’ আকারে বসানো হবে পরীক্ষার্থীদের। কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সবাইকে মাস্ক পরে ঢুকতে হবে। প্রবেশের ফটকে রাখা হবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীদের সামাজিক দূরত্ব রেখে চালাতে হবে যাবতীয় কার্যক্রম।

এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার জন্য শিক্ষা বোর্ডগুলো ইতোমধ্যে প্রশ্নপত্র তৈরি করেছে। পরীক্ষার মানবণ্টন, মূল্যায়ন পদ্ধতি ও কেন্দ্র ব্যবস্থাপনাও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি বলেন, এবারের পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা, মানবণ্টন ও কেন্দ্র ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু পরির্বতন আসবে।

অধ্যাপক নেহাল বলেন, আবশ্যিক বিষয় থাকলে যে কেন্দ্রে ১০০০ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা দিত সেখানে এবার মাত্র ২০০ পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে থাকবে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়ার জন্য আমরা আসন বিন্যাসেও বড় ধরনের পরির্বতন আনছি।

মানবণ্টন যেভাবে

এসএসসি-এইচএসসিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত এমন আবশ্যিক বিষয় ও চতুর্থ বিষয়গুলোর ওপর পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হবে না। কেবল গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক তিন বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম আমিরুল ইসলাম জানালেন, এবারের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষায় প্রতি বিষয়ে মোট নম্বর ১০০ নম্বরের বদলে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। তবে ৫০ নম্বরকে ১০০ নম্বরে রূপান্তর করে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। আর পরীক্ষার সময়ও হবে অর্ধেক অর্থাৎ তিন ঘণ্টার পরীক্ষা হবে দেড় ঘণ্টায়।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এবার এইচএসসিতে যদি কোনো শিক্ষার্থীর নৈর্বচনিক বিষয় পদার্থ, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত থাকে, তাহলে তাকে এই তিন বিষয়ের ছয়টি পত্রে পরীক্ষা দিতে হবে। এক্ষেত্রে রচনামূলক অংশে নম্বর থাকবে ৩৫ ও এমসিকিউতে থাকবে ১৫ নম্বর।’

প্রশ্নপত্র কেমন হবে এমন প্রশ্নে আমিরুল বলেন, প্রশ্নপত্র এখন যেভাবে হয়, সেভাবেই হবে। তবে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বাছাই করার ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ থাকবে। যেমন আগে যেখানে ১০টি প্রশ্নের মধ্য থেকে আটটির উত্তর দিতে হতো, সেখানে এখন সেই ১০টি প্রশ্নই থাকবে তবে উত্তর দিতে চার-পাঁচটির। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বেছে নেয়ার সুযোগ বেড়ে যাবে।

অন্যান্য বিষয়ে যেভাবে হবে মূল্যায়ন

শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগেই জানিয়েছে, এবার এসএসসি-এইচএসসি উভয় ক্ষেত্রেই গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বচনিক বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে। অন্যান্য বিষয় বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, আইসিটি ও ধর্ম এবং চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হবে না।

এসব বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের আগের পাবলিক পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে মূল্যায়ন করা হবে। এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি এবং এইচএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি ও এসএসসির ফল মূল্যায়ন করা হবে। এসএসসি (ভোকেশনাল)-এ জেএসসি ও নবম শ্রেণি এবং এইচএসসি (ভোকেশনাল)-এ এসএসসি ও একাদশের ফল মূল্যায়ন করা হবে।

এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট

এ বছর করোনার কারণে আবশ্যিক বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া না হলেও তার ওপর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট কাজ করানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের শিখন জ্ঞান অর্জন করতে এ অ্যাসাইনমেন্টের কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসএসসি-এইচএসসি, দুই স্তরে প্রতি সপ্তাহে দুটি করে অ্যাসাইনমেন্ট কাজ করে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিতে হচ্ছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক গোলাম সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, অ্যাসাইনমেন্ট কাজের মাধ্যমে একদিকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে, অন্যদিকে ক্লাস অনুযায়ী যেন জ্ঞানার্জন করতে শিক্ষার্থীরা সক্ষম হয়, সেজন্য বাসার কাজ হিসেবে অ্যাসাইনমেন্ট করানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীর অধিকাংশের কাছে এ কাজ দেওয়া নেওয়া সম্ভব হয়েছে। কিছু পরীক্ষার্থীর কাছে অ্যাসাইনমেন্টের কাজ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মাঠ কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বাড়ছে না কেন্দ্র

এবার যেহেতু শুধু নৈর্বচনিক বিষয়ের পরীক্ষা হবে, তাই কেন্দ্রসংখ্যা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই শিক্ষা বোর্ডগুলোর। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে বোর্ডগুলোকে।

ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসিয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে। আর সামনে এবং পেছনের সিট ফাঁকা থাকবে। যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে সমস্যা না হয়। আমরা আর অটোপাসের অপবাদ না নিতে চাই না। আশা করছি, করোনার সংক্রমণ অনেকটাই এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসবে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে সমস্যা হবে না।

প্রসঙ্গত, দেশে করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় তা বাড়িয়ে তা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। এই সময়ে হয়নি কোনো পাবলিক পরীক্ষা।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img