চট্টগ্রামে বাসায় গিয়ে টিকা দেয়ার ঘটনায় জড়িত স্বাস্থ্যকর্মীকে বরখাস্ত করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তবে এ ঘটনায় এখনও অভিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী বিষু দে’কে আটক করেতে পারেনি পুলিশ।
মঙ্গলবার বিকেলে বিষু দে’কে বরখাস্ত ও তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ। বিষু দে চসিকের অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মী ছিল বলে দাবি করে তিনি বলেন, ওই স্বাস্থ্যকর্মী চুক্তিভিত্তিতে চসিকের মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতালে টেকনিশিয়ানের কাজ করতো। তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে চসিক সচিব আরও বলেন, এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সেটিও আমরা বের করতে চাই। কিভাবে টিকা চুরি করে নিয়ে গিয়ে সে বাসায় গিয়ে দিল এবং এর সাথে আর কে কে জড়িত, তা জানতে আমরা পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছি। এই কমিটি আগামী তিন কার্যদিবসে প্রতিবেদন জমা দেবে।
পাঁচ সদস্যের কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলামকে। অন্য সদস্যরা হলেন- জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসক ওয়াজেদ চৌধুরী, সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট জাহানারা ফেরদৌস।
আলোচিত এই ঘটনায় চসিকের জোনাল মেডিকেল অফিসার ডা. তপন কুমার চক্রবর্তী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় মোস্তফা হাকিম ডিগ্রী কলেজের স্বাস্থ্যকর্মী বিষু দে’কে (৩৫) ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় ব্যাংকার মোবারক আলী ও টিকা নেয়া হাসান ছাড়াও তাদের আরেক বন্ধু সাজ্জাতকেও আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে বিষু ও সাজ্জাত পলাতক রয়েছেন। মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৮০/৪০৬/৪২০/৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, বিষু দে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সরকারঘোষিত কেন্দ্রে টিকা প্রদান না করে সে ও তার অন্যান্য অজ্ঞাত সহযোগীদের সহায়তায় ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বিনামূল্যে প্রদানকৃত কোভিড ভ্যাকসিন চুরি ও আত্মসাৎপূর্বক বাসায় গিয়ে অর্থের বিনিময়ে প্রদান করেছিলেন।
খুলশী থানা সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ‘এমডি হাসান’ নামে নিজ ফেসবুক আইডিতে টিকা গ্রহণের ছবি পোস্ট করে লেখেন ‘ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। অশেষ ধন্যবাদ প্রিয় বন্ধু মো. মোবারক আলীকে কোভিড ভ্যাকসিন প্রদানে সহায়তা করার জন্য। আলহামদুল্লিাহ মর্ডানার প্রথম ডোজ সম্পন্ন।’
টিকা নিয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে ঘরে বসে টিকা দেয়ার এমন ছবি নিয়ে তাৎক্ষণিক তুমুল সমালোচনা শুরু হয় ফেসবুকে। এর প্রতিক্রিয়ায় রাতেই হাসানকে গ্রেপ্তার করে খুলশী থানা পুলিশ। এরপর সকালে টিকা সরবরাহে সহযোগিতাকারী মোবারক আলীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার দুই জনের পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। আদালত আগামীকাল বুধবার এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য্য করেছেন।
এ বিষয়ে খুলশী থানার ওসি মোহাম্মদ শাহিনুজ্জামান বলেন, ঘরে বসে টিকা নেয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালত বুধবার শুনানির জন্য দিন ধার্য্য করেছেন।
তিনি বলেন, এ ঘটনাটি আমরা খুব গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। ঘটনাটি আলোচনা আসার পরই আসামি সাজ্জাদ ও চসিকের স্বাস্থ্যকর্মী বিষু দে পালিয়ে যান। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। স্বাস্থ্যকর্মী বিষু দেকে গ্রেপ্তার করা হলে জানা যাবে চসিকের আর কেউ জড়িত আছে কি না।