বর্তমানে দেশের আলোচিত নাম পরীমনি, রাজ, পিয়াসা ও মৌ। সবাই গ্রেপ্তার হয়েছেন কয়েকদিন আগেই। বর্তমানে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলেছে সংশ্লিষ্টতা।
মামলাগুলোর তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে বলেছেন, মোটা অংকের ঋণ পাস করাতে মডেল-অভিনেত্রীদের কাজে লাগাতেন প্রভাবশালী অনেক ঋণগ্রহীতা। এছাড়া আপত্তিকর ভিডিও-ছবি ধারণ করে পরে সংশ্লিষ্ট ব্ল্যাকমেইল করতেন তারা।
রোববার (৮ আগস্ট) সিআইডির এডিশনাল ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে জানান, পরীমনি, পিয়াসা ও মৌকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অনেকের নাম পাওয়া গেছে। তারা ব্ল্যাকমেইলসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছে। তবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের নাম প্রকাশ করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, যেসব নাম পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে এবং সত্যিকার অর্থে যারা এসব অপরাধে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পরীমনি-পিয়াসার সঙ্গে ব্যাংকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সখ্যতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, অনেক নাম পাওয়া যাচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে কারো নাম বলা যাচ্ছে না। খুবই গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছেন- এমন কেউ রোববার পর্যন্ত সিআইডির কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি বলেও জানান তিনি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, পরীমনি, পিয়াসা ও মৌসহ ওই চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার কেউ কেউ মৌখিক অভিযোগ করলেও মানসম্মানের ভয়ে লিখিত অভিযোগ কিংবা মামলা দায়ের করেননি এখনও। কারণ, মামলা করলে নাম প্রকাশ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা বেশ কয়েকজন উঠতি মডেলকে গাড়ি উপহার দিয়েছেন। সূত্রটি জানায়, পরীমনি, পিয়াসা, মৌয়ের মাধ্যমে কারা সুবিধা পেয়েছেন তাদের নাম বেরিয়ে আসছে।
গত ৪ আগস্ট বিকেলে চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসায় অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)। অবৈধভাবে ‘মিনিবারের’ মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা ও ডিজে পার্টিসহ বিভিন্ন আয়োজন করা হত তার বাসায়। আর এই সূত্র ধরেই অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ ওয়াইন, ভয়ংকর মাদক আইস, এলএসডি ও মাদক সেবনের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
এরপর ওইদিনই আলোচিত প্রযোজক, অভিনেতা ও রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজকে মাদকসহ আটক করে র্যাব। তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় সিসা তৈরির সরঞ্জাম, মদ ভয়ংকর মাদক এলএসডি, যৌন উত্তেজক ওষুধ।
এর আগে গত ১ আগস্ট রাতে বারিধারার বাসা থেকে আটক করা হয় মডেল ও উপস্থাপিকা ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসাকে। তার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিদেশি মদ, সিসা ও ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন রাতেই মডেল মরিয়ম আক্তার মৌয়ের রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাবর রোডের বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। তার বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ মদ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া, গত ৬ আগস্ট পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ করিম জিমিকে গ্রেপ্তার করা হয়।