রূপকথা তৈরি করে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

এক সময়ের প্রবল পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি ম্যাচ জেতাই বাংলাদেশের কাছে বিশেষ কিছু। সেখানে সিরিজ জয় তো আরো বড় ব্যাপার। চলতি সিরিজ শুরুর আগেও যা কেউ ভাবতে পারেননি, সেই অসাধ্য সাধন করে রুপকথা লিখেছে বাংলাদেশ। শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতেছে টাইগাররা।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করে নয় উইকেটে ১২৭ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ১১৭ রানে থেমেছে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। ১০ রানের জয়ে প্রথমবারের মতো ক্রিকেটের কোনো ফরম্যাটে অজিদের সিরিজ হারানোর কৃতিত্ব অর্জন করেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।

শেষ দুই ওভারে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ২৩ রান। পেনাল্টিমেট ওভারে মাত্র এক রান দেন মুস্তাফিজ। ফলে শেষ ওভারে তাদের দরকার ছিল ২২ রান। শেষ ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা খান মাহেদী। পরের বলে এক রানের বেশি নিতে পারেননি অ্যালেক্স ক্যারি। এই অফস্পিনার পরের বল ডট দিলে আরো চাপে পরে অজিরা।

কিন্তু পরের বলই নো করে বসেন মাহেদী। সুযোগ বুঝে এক রান নেন ড্যানিয়েল ক্রিস্টিয়ান। ফ্রি হিট পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি ক্যারি। শেষ বলে তাদের প্রয়োজন ছিল ১২ রান। এই বলেও এক রানের বেশি নিতে দেননি তিনি। ফলে বাংলাদেশ পায় অবিস্মরণীয় এক জয়।

এর আগে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে রান তাড়া করতে নামেন বেন ম্যাকডারমট ও ম্যাথু ওয়েড। নাসুম আহমেদের করা তৃতীয় ডেলিভারি উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন এক রান করা ওয়েড। এরপর বেশ বড় জুটি গড়েন ম্যাকডারমট ও মিচেল মার্শ। সাকিবকে সুইপ করতে গিয়ে ম্যাকডারমট বোল্ড হলে ভাঙে দুজনের ৬৩ রানের জুটি। এই ওপেনার ৩৫ রানে ফেরেন।

পরের ওভারে ময়জেস হেনরিকসকে ২ রানে ফিরিয়ে ম্যাচে উত্তেজনা আনেন শরিফুল ইসলাম। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ভীতি ছড়িয়ে যাচ্ছিলেন মিচেল মার্শ। ৪৫ বলে ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূরণ করেন তিনি। তবে শরিফুলের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে ৫১ রানে আউট হন তিনি।

শেষ দুই ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারি ২০ ও ক্রিস্টিয়ান ৭ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের হয়ে দুই উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। এছাড়া সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান একটি করে উইকেট নেন।

দিনের শুরুতে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন নাইম শেখ ও সৌম্য সরকার। হ্যাজেলউডের করা দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে উইকেটরক্ষকের কাছে ক্যাচ তুলে দেন নাইম। এই ওপেনার মাত্র এক রান করেন। পরের ওভারের প্রথম বলেই জাম্পার বলে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে ২ রানে আউট হন অপর ওপেনার সৌম্য সরকার।

শুরুতেই দুই উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দুজনে মিলে গড়েন ৪৪ রানের জুটি। অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ তুলে দেন সাকিব। এর আগে ১৭ বলে করেন ২৬ রান।

পাঁচ নম্বরে নেমে দ্রুত রান তুলছিলেন আফিফ হোসেন। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৯ রানে রান আউট হন তিনি। জিম্বাবুয়ে সিরিজে ভালো করলেও এই ম্যাচে ব্যর্থ শামীম আহমেদ। ৮ বল খেলে ৩ রান করে ফেরেন তিনি।

নুরুল হাসান সোহান নেমেই একটি ছয় হাঁকিয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে তিনিও রান আউট হন। এর আগে করেন ১১ রান। শেষ ওভারে ফিফটি তুলে নেন রিয়াদ। চলতি সিরিজে এটাই দুই দল মিলে কারো প্রথম হাফ সেঞ্চুরি।

তবে এলিসের করা পরের বলেই বোল্ড হয়ে যান রিয়াদ। এখানেই থেমে থাকেননি এই অজি পেসার। পরবর্তী দুই বলে মুস্তাফিজুর রহমান ও মাহেদী হাসানকে আউট করে অভিষেকেই হ্যাটট্রিকের বিরল কীর্তি গড়েন তিনি। ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে এই রেকর্ড গড়েছেন অজি পেসার।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ইনিংসের শেষ তিন বলে তিন উইকেট নেন নাথান এলিস। এছাড়া দুটি করে উইকেট শিকার করেন জশ হ্যাজেলউড ও অ্যাডাম জাম্পা। সিরিজের চতুর্থ টি-২০তে আগামীকাল একই ভেন্যুতে মুখোমুখি হবে দুই দল।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img